কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো জন্মে
প্রিয় পাঠক আপনারা হয়তো বা কোন ফসল কোন সময় ভালো হয় এ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন বা এটা জানার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজি করছেন,কোন সমস্যা নেই আমরা এখন আপনাদের কে জানিয়ে দেবো কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো হয়। আপনি যদি মনোযোগ দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়েন আশা করি তাহলে আপনার সকল সমস্যার সমাধান আপনি পেয়ে যাবেন।
কোন ফসল কোন সময় ভালো হবে এ সম্পর্কে জানতে নিচের পোস্টটি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়বেন।পোস্টটি পড়লে জানতে পারবেন সঠিক নিয়মে ফসল চাষের পদ্ধতি এবং কোন ফসল কোন সময় রোপন করতে হবে এ সম্পর্কে ।
ভুমিকা
আমাদের দেশ ঋতু বৈচিত্রের দেশ। আমাদের দেশকে ছয়টি ঋতুতে সাজানো হয়েছে। এই ঋতু গুলোর এক একটি এক এক সময় হয়।আমাদের বারো মাসকে ছয়টি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে। এই ঋতু ভেদে আমাদের দেশে ফসল চাষ করা হয়। সব ফসল হতে চায় না। কারণ কোন ফসল শীতে হয়, কোন ফসল গরমে হয়, কোনো ফসল বর্ষায় হয়। তাই ঋতু ভেদে ফসল চাষের সময় ভিন্ন ভিন্ন।আপনাদের অনেকেই জানেন না কোন ঋতুতে কোন ফসল চাষ করলে লাভবান হওয়া যায। তাই এখন আমরা আপনাদেরকে জানিয়ে দিব কোন ফসল কোন ঋতুতে চাষ করলে আপনারা অধিক লাভবান হবেন। আপনারা যদি মনোযোগ সহকারে আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন কোন ঋতুতে কোন ফসল চাষ করে আপনারা লাভবান হবেন ।
কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো জন্মে
বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের প্রায় ৮০% মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। এদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। এর জন্য অধিক পরিমাণ ফসল উৎপাদন করতে হয়। আমাদের দেশে মৌসুম ভেদে ফসল উৎপন্ন হয়। সব সময় সকল ফসল উৎপন্ন করা যায় না। তাই বাংলাদেশের কৃষি মৌসুমকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন খরিফ১,খরিফ ২ ও রবি মৌসুম। আমাদের বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে ভৌগলিক পরিবর্তন,জলবায়ু ও আবহাওয়ার দিক বিবেচনা করে প্রায় সারা বছরেই ফসল উৎপাদন করা হয়।
বৈশাখ মাস অর্থাৎ মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য মে মাস
এপ্রিল মাস বা বৈশাখ মাসে আদা,হলুদ লাল শাক, ডাঁটা পাতা পেঁয়াজ, পাটশাক,বেগুন বিজ রোপনের জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে ধরা হয়। এবং এই সময় এর সাথে কিছু গ্রীষ্মকালীন সবচেয়ে যেমন টমেটো বীজ রোপন করা যায়। এবং এই সময় কিছু সবজি যেমন মিষ্টি কুমড়া মাচা তৈরীর পাশাপাশি চারা তৈরি করতে হবে।উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করা গাছের মধ্যে সার প্রয়োগ করা পানি সেচ দেওয়া বৈশাখ মাসে কিছু প্রয়োজনীয় কাজ।
জৈষ্ঠ মাস অর্থাৎ মধ্য মে থেকে মধ্যজুন মাস
খরিফ২ ফসল সবজি উৎপাদনের জন্য চারা তৈরি বা কচি,সজিনা,তরমুজ,বাঙ্গি ফলগুলো সংগ্রহ করতে হবে এবং আগের রোপণকৃত বীজগুলো গোড়ার মাটিতে সার দেয়ার পাশাপাশি মাটি খুঁড়ে পানি দিতে হবে ।গ্রীষ্মকালীন টমেটো রোপন করার পর একে ভালোভাবে পরিচর্যা করতে হবে। সজিনা শাক ডাটা সংগ্রহ করতে হবে। চারা রোপন করার জন্য গর্ত করে নিতে হবে।গর্তের মধ্যে সঠিক বিজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের কয়েকদিন পর যে চারা গুলো বের হবে সেগুলো কে বিশেষ যত্ন করতে হবে। এরপর এ গাছগুলো বড় হয়ে যখন ফল ধরবে সে ফলগুলো বাজারজাত করার জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
আষাঢ় মাস অর্থাৎ মধ্যজুন থেকে মধ্য জুলাই মাস
আষাঢ় মাস মানে বর্ষাকাল।এ সময় গ্রীষ্মকালীন সবজি যেগুলো লাগানো হয়েছে সেগুলোতে পোকামাকড় ধর সম্ভাবনা থাকে।তাই এ সময় ফসলের পোকামাকড় দমনে বিশেষ যত্নশীল হতে হবে। এ সময় আগাম যেসব সবজি লাগানো হয়েছে যেমন টমেটো ঢেড়স এগুলোর ফল পাওয়া যেতে পারে।আপনারা যদি জেনে থাকেন এ সময় কোন ফসল ভালো হবে সেসব আসলেই লাগাবেন। আপনি যখন খরিপ২ এ যেগুলো সবজি চাষ করেছেন এগুলো শেচ প্রয়োগ করতে হবে,সার দিতে হবে ও পরিচর্যা করতে হবে। আপনি যদি ভালো ফসল ফলাতে চান তাহলে নিচের আলোচনা গুলো আরও মনোযোগ সহকারে পরুন।
শ্রাবণ মাস অর্থাৎ মধ্য জুলাই থেকে মধ্য আগস্ট মাস
আপনারা যদি আগামীতে কোন ফসল চাষ করতে চান, তাহলে এ সময় সেগুলোর বীজ বপন করতে হবে। যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি এরকম নানান ধরনের বীজ বপন শুরু করতে পারেন।এ সময় আপনি খরিফ দুই এর সবজিগুলো সংগ্রহ করতে পারবেন। এবং বাজারজাত করতে পারবে। নতুন যে পিস গুলো বপন করবেন সেগুলোতে যেন পোকামাকড় না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে । এবং যেগুলো ফসলের বেড়া প্রয়োজন সেগুলোকে বেড়া দিয়ে ঝুলিয়ে দিতে হবে।
ভাদ্র মাস অর্থাৎ মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর মাস
এ সময় নতুন ব্রিজ থেকে যেসব চারাগাছ বেরিয়ে বড় হয়েছে সেগুলোতে সার প্রয়োগ করতে হবে। এবং যেগুলো বয়স্ক গাছ হয়ে গেছে ফল ধড়ে গেছে সেগুলো থেকে বীজ সংগ্রহ করে রাখতে হবে। আগামীতে যেসব ফসল চাষ করবেন সেরকম বীজ সংগ্রহ করবেন যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন এরকম ধরনের ফসল।
আশ্বিন মাস অর্থাৎ মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য অক্টোবর মাস
আশ্বিন মাস চারা রোপনের মাস। আপনার কাছে যেসব চারা সংগ্রহে আছে সেগুলোর চারা রোপন করতে পারবেন। বিভিন্ন ধরনের সেচ দেওয়ার পরে পোকামাকড় দমনের জন্য ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। যেমন ওলকপি, সিম,লাউ,বরবটি ইত্যাদি ধরনের সবজি এগুলোতে সার প্রয়োগ করবেন এবং আগাছা গুলো পরিষ্কার করে নিবেন।
কার্তিক মাস অর্থাৎ মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর মাস
এই মাসে আপনি আলু চাষ করতে পারেন। লআলুর আইল বেধে রাখা ও যেগুলো সবজি রয়েছে সেগুলোর পরিচর্যা করবেন। লযেগুলো বীজ রয়েছে এগুলো জমিতে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। লআগামী যেগুলো সবজি রয়েছে সেগুলোর আগাছাগুলো ভালো করে কেটে ফেলতে হবে এবং সার প্রয়োগ করে মাটি ভালো রাখতে হবে।
অগ্রহায়ণ মাস অর্থাৎ মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর মাস
এ সময় পেঁয়াজ মরিচের জন্য চারা ও মিষ্টি আলুর লতা লাগাতে পারেন। এরপর এগুলো যত্ন নিতে হবে,জমিতে যদি আগাছা হয়ে থাকে তাহলে আগাছা গুলো পরিষ্কার করে নিতে হবে, শেচ দেওয়ার জন্য সার প্রয়োগ করতে হবে। আপনি এর আগের মাসে যেগুলো ফসল উৎপাদন করেছেন সেগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
পৌষ মাস অর্থাৎ মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারি মাস
যেসব সবজি আগামীতে উঠবে সেগুলো যদি কোন রোগ বালাই থাকে ও পোকামাকড় হয়ে থাকে সেগুলো দমন করতে হবে এবং সবজিগুলো সংগ্রহ করে নিতে হবে। আরো অনেক ধরনের অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে যেন আপনি বানিজ্যিক ভাবে মৌসুমের ফসলের চাষ করার ইচ্ছা থাকে তাহলে আপনাকে খুব যত্নশীল হতে হবে কোন ধরনের অবহেলা করা যাবে না।
মাঘ মাস অর্থাৎ মধ্য জানুয়ারি থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি মাস
আপনি যদি আলুর চাষ করে থাকেন ও বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করে থাকেন যেমন পিয়াজ ও রসুন এরকম ধরনের চাষ করেন তাহলে আপনার সর্বপ্রথম গাছের মাটি তুলে দিতে হবে এবং ভালোভাবে সেচ দিতে হবে যাতে আপনার ফসেলের কোন ধরনের ক্ষতি না হয়।এসব চারা গাছ গুলোর উপর প্রচুর পরিমাণ। যত্নশীল হতে হবে।
ফাল্গুন মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ
আপনি আবার যেভাবে সর্বপ্রথম চারা থেকে বীজ ও সবজি উৎপাদন করেছেন সেভাবে আপনার বীজ বপন করতে হবে যাতে আপনার জমির তৈরি করা ফসল আবার পুনরায় রোপন করতে পারেন।বীজ থেকে চারা রোপনের সময় আপনার অতিরিক্ত খেয়াল রাখতে হবে এবং আপনি যখন আলু চাষ করবেন তখন আলু রোপনের দশ দিন থেকে শুরু করার পর সর্বোচ্চ ১০০ দিনের মধ্যে মাটির ভিতর থেকে আলু তুলে নিতে হবে।
চৈত্র মাস অর্থাৎ মধ্য মার্চ থেকে মধ্য এপ্রিল মাস
আবার আপনি এভাবে গ্রীষ্মকালে যেসব ধরনের সহ্য বীজ রোপন করেছেন সেসব সবজি ও বিচ রোপন করতে হবে। ভালোভাবে জমিতে সার ও সেচ দিয়ে বীজ রোপণ করতে হবে। বীচ রোপনের পর এতে যেন পোকামাকড় না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এবং অধিক যত্নশীল হতে হবে। এভাবেই পুনরায় বীজ রোপন করে চারা তৈরি করবেন। এবং সঠিক জমিতে সঠিক চারা প্রয়োগ করবেন।অধিক ফসল পেতে হলে সঠিক সার প্রয়োগ করতে হবে এবং শেচ দিতে হবে। এভাবে আপনি কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো জন্মে বুঝতে পারবেন। সঠিক নিয়ম মেনে ফসল চাষ করলে অবশ্যই ফসল ভালো হবে।
গ্রষ্মকালীন সবজির তালিকা
গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে বেগুন ঢেরস মিষ্টি কুমড়া কাকরোল করলা পটল পুই শাক লাল শাক ডাঁটাঘিমা কর্মী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব সবচেয়ে বেশ বপন ও চারা রোপনের আগে কি পরিমাণ স্বাদ দিবেন তা যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। গ্রীষ্মকালীন সবজির বৈচিত্র কম থাকে। কিন্তু এ সময় যেসব সবজির ফলন হয় প্রচুর পরিমাণে হয়। তাই অল্প কিছু সবজি হলেও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
সবজিগুলো পুষ্টি উপাদান ও শরীরের উপকারিতা নিয়ে রাজধানীর গার্হস্থ্য অর্থনৈতিক কলেজের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও পুষ্টিবিদ রেহানা বেগম জানান-পটল,শসা,টমেটো,মিষ্টি কুমড়া,চাল কুমড়া,কাঁকরো,ইত্যাদি গ্রীষ্মকালীন সবজিতে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম, আয়রন জিংক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মিনারেল ও ভিটামিন-এ সহ নানান উপাদান। এসব উপাদান আমাদের শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ রাখতে বেশ কার্যকরী।
লেখকের মনতব্য
আপনি যদি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে কোন মৌসুমী কোন ফসল ভালো জন্মে।ফসল উৎপাদনের জন্য অবশ্যই আমাদের পোস্টটি আপনার উপকারে আসবে। উপরে পোস্টটিতে ১২ মাসের সবজি চাষ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।আপনাদের আমার এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন । ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url